জীবন রক্ষাকারি ওষুধের বাজার অস্থির। দাম বাড়ছে ওষুধের। আছে নিম্নমানের ওষুধ। আছে ওষুধে ভেজাল। আরও আছে ওষুধের অপব্যবহার। দেশে বিশ্বমানের অনেক ওষুধ তৈরি হওয়া সত্ত্বেও এর সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে
না। ওষুধ উৎপাদন থেকে বিপণনের বিভিন্ন ধাপে নষ্ট হচ্ছে এর মান। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ওষুধের যত্রতত্র বিক্রি। সবচেয়ে ভোগান্তির বিষয় হচ্ছে ওষুধের অপব্যবহার। আর সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। সব মিলিয়ে অনিরাপদ হচ্ছে রোগির সামগ্রিক সুরক্ষাব্যবস্থা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত দশটি ওষুধের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। অথচ ৭০ শতাংশ গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন করা হয় অপ্রয়োজনে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৭৮০ কোটি টাকার। দেশের মোট ওষুধের বাজারের বড় অংশই দখল করে আছে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। গত অর্থবছরে দেশের বাজারে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকমাত্রায় দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে পড়তে পারে; এমনকি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে স্নায়ুতন্ত্র । তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবন না করতে
পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ওষুধের যুক্তিহীন ব্যবহার ও প্রয়োগ বর্তমান বিশ্বের এক অন্যতম সমস্যা। আর রোগির সমস্যা চিহ্নিত না হলে ওষুধের যুক্তিসংগত প্রয়োগ এবং এর প্রকৃত উন্নয়ন কোনোমতেই সম্ভব নয়। দেশের ক্লিনিক, হেলথ কমপ্লেক্স বা
হাসপাতালগুলোতে ওষুধের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ হচ্ছে অহরহ। অনিয়ন্ত্রিত ওষুধের ক্রয়-বিক্রয়ও। দেখা যায়, দক্ষ ফার্মাসিস্ট ছাড়াই অসংখ্য ওষুধের দোকান পরিচালিত হচ্ছে। অনেক সময় চিকিৎসকেরাও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। অনেক চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানি কর্তৃক প্রভাবান্বিত ও প্রলুব্ধ হয়ে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর ও দামি ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখতে বাধ্য হচ্ছেন। চিকিৎসক ঠিকমতো রোগ নির্ণয় করে
যুক্তিসংগতভাবে ওষুধ প্রদান না করলে রোগি ওষুধের অপব্যবহারের শিকার হবেই । ওষুধের অপব্যবহার রোধে দরকার সব মহলের সর্বাত্মক সচেতনতা। বাজারে চলছে ওষুধের জোয়ার। আমাদের চিকিৎসকরা প্রকৃত ওষুধ খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাজার প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় ওষুধে ভরে গেলে সব ওষুধের ওপর সম্যক ধারণা অর্জন কোনো চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব নয়।
ওষুধের ফলপ্রসূ ও যুক্তিসংগত প্রয়োগের জন্য কোম্পানি প্রদত্ত নামের পরিবর্তে ওষুধের জেনেরিক নাম ব্যবহার জরুরি। তাছাড়া, একটি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকাও থাকা প্রয়োজন। সুচিকিৎসার স্বার্থে চিকিৎসকদের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন থাকা প্রয়োজন বলে আমার মনে করি
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।