ঢাকাসোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ

বাহুবলে খুঁড়া কবর ভরাট করে লাশ দাফনে আওয়ামীলীগ নেতার বাঁধা॥ ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

প্রতিদিন বাংলাদেশ
ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

প্রতিনিধি, বাহুবল (হবিগঞ্জ)

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরি ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামে মাজারের কবরস্থানে শাহ হাবিবুর রহমান (৬৭) নামে এক ব্যক্তির লাশ দাফনে আওয়ামীলী নেতা ও তার লোকজনের বাঁধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। লাশ দাফনের পূর্বে অনুমতি না নেয়ায় তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে জোরপূর্বক খুঁড়া কবর ভরাট করে ফেলে। এতে নিরুপায় হয়ে অন্যত্র লাশ দাফন করেন মরহুমন শাহ হাবিবুর রহমানের পরিবারের লোকজন।

এদিকে, কবরস্থানে মরহুমের লাশ দাফনে বাধা দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। দ্রুত আওয়ামী লীগ নেতা ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন অনেকেই। জানা যায়, পূর্ব পুরুষ থেকে কুমেদপুর গ্রামের মাজার সংলগ্ন এলাকায় লাশ দাফন করে আসছেন স্থানীয় লোকজন। গত বুধবার সন্ধ্যায় ওই গ্রামের বাসিন্দা শাহ হাবিবুর রহমান মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান। ওই দিন রাতেই মরহুমের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন তার ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ সামাদুর রহমান। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ওই কবরস্থানে মরহুমের লাশ দাফন করতে কবর খুঁড়ার কাজ শেষ করেন পরিবারের লোকজন। জানাযার নামাজ শেষ করে লাশ দাফন করতে গেলে এতে বাঁধা দেন আব্দারায়ন গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুল্লাহ মিয়া ও তার ছেলে বাহুবল উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম আজাদ বাঁধা দেন। এ নিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ সামাদুর রহমানের সাথে তাদের বাক-বিতন্ডা হয়। এর জের ধরে আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আবদুল্লাহ মিয়া, তার ছেলে শ্রমিকলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম আজাদ, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোঃ জসিম, মোঃ বাবুল মিয়া, মোঃ শাহীন মিয়া, আওয়ামী নেতা মোঃ মনজুর আলী ও মোঃ আবু তাহেরসহ ১০/১২ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে ভয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন মরহুমের আত্মীয়-স্বজন। এক পর্যায়ে উল্লেখিতরা জোরপূর্বক খুঁড়া কবর মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলে এবং কবরস্থান থেকে অন্যান্য লাশের হাড় তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। পরে দুপুর আড়াইটায় নিরুপায় হয়ে কবরস্থানের পার্শ্ববর্তী স্থানে শাহ হাবিবুর রহমানের লাশ দাফন করেন পরিবারের লোকজন।

এদিকে, বিষয়টি জানতে পরে পুটিজুরী ফাড়ি তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে। তবে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা কারীরা লাশ দাফনে বাধা দেয় এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ সামাদুর রহমানের লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে বলে জানান স্থানীয়রা। এদিকে, অপর একটি সূত্র জানায়, পূর্ব পুরুষ থেকে শুরু করে মাজার সংলগ্ন এলাকায় লাশ দাফন করে আসছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ সামাদুর রহমানের পরিবারের লোকজন। ২০১৯ সালে পার্শ্ববর্তী আন্দায়ায়ন গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আবদুল্লাহ মিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার পর থেকে গ্রামে নতুন কিছু নিয়ম কায়েম করেন। এতে লাশ দাফনসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে গ্রামবাসীকে তার অনুমতি নিতে বাধ্য করেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায়নি। যে কারনে বুধবার অনুমতি না নিয়ে শাহ হাবিবুর রহমানের লাশ দাফন করতে গেলে উল্লেখিতরা ব্যথা প্রদান করেন।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহ সামাদুর রহমান বলেন, ‘আমার বাবা মারা গেলে কবরস্থানে লাশ দাফন করতে চাই। তবে অনুমতি না নেয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আব্দুল্লাহ মিয়া ও তার ছেলে প্রভাব দেখিয়ে লাশ দাফনে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করলে আমরা বাবার লাশ অন্যত্র দাফন করি। ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ পতনের পরও তারা গ্রামে প্রভাব বিস্তার করছে।

বাহুবল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মাজার সংলগ্ন জায়গা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এতে লাশ দাফনে বাধার খবর পেয়ে পুটিজুরি ফাড়ি কেন্দ্রের পুলিশকে প্রেরণ করি। তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।