রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: আদালতের আদেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে থাকা বৈষম্যবরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদ হত্যা মামলার ১৪টি আলামত জব্দ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকালে রংপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাশেদুল হোসাইন শুনানি শেষে আলামত জব্দের আদেশ দেন। রংপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর শাহীনুর আলম বলেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্তের প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিবিআইয়ের কাছে থাকা আলামত জব্দের জন্য আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনালের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার এস এম মইনুল করিম। এসময় উপস্থিত ছিলেন আবু সাঈদ হত্যা মামলার আরেক তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই রংপুরের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন। আদালত শুনানি শেষে ১৪টি আলামত জব্দের নির্দেশ দেন। শুনানিতে অংশ নেয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টর এস এম মইনুল করিম বলেন,আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সেকশন-৮,সাব সেকশন এ-৩/১ এর ক্ষমতা বলে আদালতের আদেশ ছাড়াই আলামত জব্দ করার ক্ষমতা দেয়া আছে। তদুপরি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই আইনে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে আলামত জব্দ করা হয়েছে। পিবিআইয়ের কাছে আরও অনেক আলামত আছে। এখন তদন্তের প্রয়োজনে যে ১৪টি আলামত প্রয়োজন সেগুলো আদালাতের আদেশে ট্রাইব্যুনাল জব্দ করা হয়। প্রয়োজনে বাকিগুলোও জব্দ করা হবে। পিবিআই সূত্রে জানা যায়, আদালতের আদেশে পিবিআইয়ের কাছে থাকা বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ, আবু সাঈদের রক্তমাখা শার্ট, হাসপাতালে ভর্তির সময় বুলেটবিদ্ধ রক্তমাথা শরীরের ছবি, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, ফরেনসিক আলামতসহ ১৪টি আলামত যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তাকে জব্দ করতে দেয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আলামতগুলো ঢাকায় ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। পিবিআই রংপুরের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন বলেন, আদালতের আদেশে আমাদের কাছে থাকা আলামতগুলোর মধ্যে ১৪টি আলামত আমরা ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান। আইনি প্রক্রিয়ায় আলামতগুলো ট্রাইব্যুনালকে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এর আগে গত ২০ জানুয়ারি আবু সাঈদ হত্যার ঘটনাস্থল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনের এলাকা পরিদর্শন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটরের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল। পরে ভিসির কনফারেন্স রুমে আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আবু সাঈদকে প্রথমে উদ্ধারকারী কলেজ শিক্ষার্থী সিয়াম আহসান আয়ান, সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন, মামলার বাদি সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী, গুলিবিদ্ধ ভ্যানচালক ওমর আলীসহ বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এছাড়াও আবু সাঈদসহ জুলাই বিপ্লবে শহীদ রংপুরের ২২ জনের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, গণমাধ্যমকর্মী এবং আহতদের সরাসরি সাক্ষ্য এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ১৬ জুলাই দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলিতে মারা যান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এ ঘটনার পর বাড়তি মাত্রা পায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। পর অন্তর্বর্তীকালিন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় শিক্ষার্থী ও বিএনপি-জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের নামে পরের দিন ১৭ জুলাই একটি মামলা করেছিল পুলিশ। গত ৫ আগস্টের পর ১৮ আগস্ট মামলা করেন বড় ভাই রমজান আলী। ওই মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আব্দুল্লাহ আল-মামুন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন, সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান ও আল ইমরান হোসেন, এএসআই আমীর আলী, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়–য়া, প্রক্টোরিয়াল কর্মকর্তা রাফিউল হাসান, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক আসাদুজ্জামান মন্ডল, পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই বিভূতি ভূষণ রায়, তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় রায়, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। পরে ১৪ অক্টোবর আরও সাতজনকে ওই মামলায় এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মামলা বাদি আদালতে আবেদন করেন। গত ২৯ অক্টোবর এক আদেশে বিচারক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. হাসিবুর রশিদ, সাবেক প্রক্টর ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) শাহ নূর আলম পাটোয়ারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক ও অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নূরুন্নবী, সুরতহাল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা এসআই তরিকুল ইসলাম ও সুরতাহাল রিপোর্টে প্রতিস্বাক্ষরকারী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাতকে আসামি হিসেবে এজাহারে অন্তর্ভুক্তির আদেশ দেন। এনিয়ে এই মামলায় ৩৪ জন নামীয় আসামি রয়েছে। এ মামলায় গ্রেফতার চার আসামিকে আগামী ৯ এপ্রিল হাজির করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৩ জানুয়ারি প্রাথমিকভাবে ২৫জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় পুলিশের কনস্টেবল সুজন চন্দ্র, এসআই আমির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমনার চৌধুরী আকাশ গ্রেফতার আছেন। এই মামলার আসামি সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন অন্য মামলায় গ্রেফতার আছেন।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।