কারিমুল হাসান, ধুনট (বগুড়া):
পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে পরিবর্তন হইনি এমন কোন বিষয়বস্তু কারো চোখ কখনো দেখেনি। যেমন পরিবর্তন হয়েছে ঋতু, তেমনি পরিবর্তন হয়েছে সময় ও সমসাময়িক পরিস্থিতি। পরিবর্তনের ধারা কল্পে কিছু পরিবর্তন যেমন হয় প্রাকৃতিক তেমনি হাজারও পরিবর্তন হয় সময়ের পরিবর্তনে। সংস্কার হয় অনেক কিছু। কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই – আগষ্টে রাজপথে আন্দোলনে নামে দেশের ছাত্র জনতা। আন্দোলনে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে সাধারণ মানুষের উপর নির্বিকারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগও ওঠে। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশকে এমন নরকীয় দমন-পীড়নের জন্য শাস্তির আওতায় আনার জন্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা সহ সারাদেশের মানুষ ফুপে উঠে। তখই পুলিশ নিরুপায় হয়ে দলীয় দাসত্বের নির্মম ইতিহাস জনসম্মুখে প্রকাশ করতে শুরু করে। পুলিশ অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের প্রতি মানুষের ক্ষোভ আছে, কারণ পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। উপর থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত সবাই অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে গেছে। একটা দলের আজ্ঞাবাহ হয়ে কাজ করতে হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার পুলিশকে জিম্মি বাহিনী বানিয়েছে। পুলিশ হুকুমের গোলাম ছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাদের কাঠের পুতুল বানিয়ে রেখেছিলো। পুলিশ তাদের নীতিমালা অনুসরণ করে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারেনি। যার প্রমান বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়া এবং অনেকটা তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও দৃশ্যমান। দেশের অনেক থানার মত বগুড়ার ধুনটেও পুলিশের উপর তৎকালিন ক্ষমতাসীন দলের চাপ ছিল বিদ্যমান। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পরে চাপটা এখনও আছে কিনা তা জানতে অনুসন্ধান করা হয়। তাতে ক্ষমতার পরিবর্ত দেখা মিললেও চাপের তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। উপজেলা জুড়ে রয়েছে সরকারি সকল দপ্তরে রাজনৈতিক বলয়, অসৌজন্যমূলক আচরণ, চাপ প্রয়োগ সহ নানা অনিয়ম। সাধারন মানুষের ধারনা আগে একটি মাত্র দল তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করতো আর এখন বিভিন্ন দল নানা ভাবে লবিং সুপারিশসহ চাপের প্রয়োগ তথা ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। গণ-অভ্যুত্থানে নানা অভিযোগ মাখা পুলিশ এখন নিরুপায় হয়ে বর্তমান সময়ে কিছু রাজনৈতিক নেতাদের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়েছে পড়েছে। থানায় যেখানে সাধারণ মানুষ সেবা নিতে অবাধ যাতায়াত করবে,সেখানে ২৪ ঘন্টায় যেন নেতাকর্মীদের নানা আনাগোনা করতে দেখা যাচ্ছে। যার ফলে সঠিক সময়ে যেমন সেবা দিতে পারছে না পুলিশ, তেমনি অনেক সাধারণ মানুষ অভিযোগ দায়ের করতে হিমশিম খাচ্ছেন। রফিকুল ইসলাম নামের এক সেবা প্রত্যাশী জানান, আমি ধুনট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করতে এসেছি। কিন্তু আমার এলাকার এক নেতা দীর্ঘ ৪ ঘন্টা থানার ভিতরে অবস্থান করায় আমার অভিযোগ দায়ের করতে দেরি হয়েছে। তার কাছে কারন জানতে চাইলে তিনি জানান, থানার সামনে কিছু দালালের উপস্থিতি থাকাটা অনেকটাই বিরক্তিকর। কারন তাদের মাধ্যমেই গোপনীয়তা প্রকাশ পায়। এ অভিযোগ গুলোর কারনে ক্ষুন্ন হচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ভাবমূর্তি। তবে দেশের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও নির্মমতার শিকার বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাথে একমত প্রকাশ করে রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরে নেতাকর্মীদের লিফলেট বিতরণ সহ নানা কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি সব সময় নিজ দলীয় কোন নেতাকর্মী” যদি কোন ধরনের নৈরাজ্যে জড়িয়ে পড়ে তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে বারবার হুশিয়ারী করে আসছেন। কোথাও কোথাও অভিযোগ পাওয়া মাত্রই দল থেকে বহিষ্কারসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি সকলের সহযোগিতায় আগামীতে একটি সুষ্ঠু সুন্দর রাস্ট্র গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারেক রহমানের মত জামায়াত ইসলামীর আমীর সহ ছোট বড় সব রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ নৈরাজ্য বন্ধে কঠোর অবস্থানে আছে। তবুও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কতিপয় অসাধু নেতাকর্মীরা যেন নাছোড়বান্দা। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের মতই পুলিশকে দলীয় কর্মীর মত ব্যবহার করতে ব্যস্ত রয়েছে। যদি এভাবে চলতেই থাকে তাহলে সদ্য পতিত স্বেরাচারী সরকারের মত ভবিষ্যতে তাদেরও এমন করুণ পরিনতি হতে পারে বলে অভিমত অনেকের। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ছাত্র জনতা ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেন। ড. ইউনুসের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা ১৭ বছরের ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দমন-পীড়ন ও জুলুম নির্যাতনের শিকার সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চান। দেশের এই সংকটে সব দলই সমর্থন জানায়। এতে বেশি লাভবান হয় দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বড় দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াত। আর তাতেই কপাল খুলে সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দুই দলের সুযোগসন্ধানী কতিপয় নেতাদের।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ বলছে, গনঅভ্যুত্থানে স্বেরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে তাতে দেশ পুনরায় স্বাধীন হলেও সেই দলীয় প্রভাব থেকে মুক্তি মেলেনি পুলিশের। তারা আগের মতই ভিন্ন দলের চাপে পড়ে যাচাই বাঁচাই ছাড়াই আইনশৃংখলা পরিস্থতি পরিচালনা করছে। এতে দেশ আবারও বড় ধরনের সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুল আলম জানান, দলীয় প্রভাবে কাজ করছে বা পুলিশের উপর দলীয় চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বর্তমান সময়ে পুলিশের উপর এমনটি করার কোন সুযোগ নেই। তবে যে কেউ যেমন অভিযোগ দিতে পারে তেমনি যে কেউ সুপারিশও করতে পারে। পুলিশ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে যাচ্ছে। পুলিশ সবসময় সতন্ত্র মনভাবে সাধারন মানুষের সেবায় নিয়োজিত।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।