রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি: একটা সময় অভাব-অনটন ছিল। তবে আবু সাঈদ ছিল। এখন অনেক কিছুই হয়েছে কিন্তুআবু সাঈদ নেই। তার না থাকার ব্যাথায় ব্যাথিত আবু সাঈদের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশি রংপুরে মানুষ। শহীদ আবু সাঈদের টিউশনির টাকায় কেনা জামা কিংবা মেহেদির রঙে মেশানো নিখাদ ভালোবাসাটুকু হয়ত স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে অন্য সব অর্থবিত্তের বেড়াজালে। তবে তার না থাকাটাই যেন এক আকাশ সমান শূন্যতা, বুকভরা হাহাকার কিংবা অপূর্ণতার দীর্ঘশ্বাস তার পরিবারে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক শহীদ আবু সাঈদকে ছাড়াই বুকের কোণে লুকিয়ে থাকা এমন শূন্যতা-হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাস নিয়েই এবার প্রথম ঈদ কাটান মা-বাবাসহ স্বজনরা। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের জাফরপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন আবু সাঈদ। বাবা মকবুল হোসেন একজন দিনমজুর। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আবু সাঈদ ছিলেন সবার ছোট। তাদের তিন বোন রয়েছে। এর মধ্যে সুমি খাতুন সবার ছোট। ফেলে আসা ঈদের দিনগুলো মনে করে আবেগাপ্লুত সুমি বলেন, ভাই যতটুকু পারতো আমার বাচ্চা, বড় বোনের বাচ্চাদের জন্য জামা, মেহেদি কিনে আনতো। ঈদের সময় বাড়িতে এসে ছুটে যেত আমার শ্বশুরবাড়িতে। মনে হয় না যে ভাই আর নেই। মনে হয় এবারো হয়ত ভাই ঈদে বাড়িতে এসে আমার কাছে আসবে। ভাইয়ের হাসি, ভাইয়ের স্মৃতি কল্পনায় ভেসে ওঠে। মনে হয় ভাই এখনো জীবিত আছে। সুমি বলেন, এবারের ঈদটা অনেক কষ্টে কাটিয়েছে। আগে আমাদের কোনো কিছুই ছিল না। যা পেতাম তাই ভাগাভাগি করে হাসিখুশিতে খেতাম। এখন হয়ত টাকা পয়সা আছে অনেক। কিন্তু ভাইয়ের সঙ্গে সেই ভাগাভাগিটা আর হবে না। ঈদে বাড়িতে সবকিছু থাকলেও ছিল শুধু আবু সাঈদ। আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, গোটা দেশটা দিলেও তো অন্তরটা ঠান্ডা হবে না। যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবে না। আর কোনোদিনতো ফিরে পাবো না তাকে। টিউশনির টাকায় ঈদে বাবার জন্য পাঞ্জাবি ও মায়ের জন্য শাড়ি আনতেন আবু সাঈদ। ঈদের দিন একসঙ্গে নামাজ পড়তে যাওয়ার স্মৃতি মনে পড়লে খুব কষ্ট হয়। সেইসব স্মৃতি আর আওড়াতে চান না বৃদ্ধ মকবুল হোসেন। তবে ছেলের হত্যাকান্ডে জড়িত সব আসামির গ্রেফতার ও শান্তির দাবি জানান তিনি। এখন অনেক কিছুই হয়েছে। হয়ত আরও হবে। তবু কোথায় যেন কিছু একটা নেই। হয়ত এই না থাকাটাই মা মনোয়ারা বেগমের বুকজুড়ে শূন্যতা, মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে জেগে ওঠার কষ্ট, নীরবে-নিভৃতে বেরিয়ে আসা চোখের জল। মনোয়ারা বেগম বলেন, মনে খুব বেশি শান্তি লাগছে না। মনের কষ্ট মনে নিয়েই কাটাতে হয়েছে ঈদের দিন। যতদিন বেঁচে থাকবো এই কষ্ট দূর হবে না। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। গত বছরের ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। ১৭ জুলাই বাবনপুরে গ্রামের বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে গুলি করার দৃশ্য দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে সারা দেশে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।