কারিমুল হাসান, ধুনট(বগুড়া):
গ্রামের আঁকাবাঁকা সরু মেঠোপথ। এ পথেই উচ্চ স্বরে শিলপাটা ধার কাটান বলে এক সময় হাঁকডাক দিতো খোদাই শিল্পীরা। ডাক দিলে বাড়ির ভেতর থেকে ক্ষয়ে যাওয়া মসলা বাটার শিল পাটা নিয়ে বেরিয়ে আসতেন গৃহিণীরা। এখন আর নেই সেই চিরচেনা চিত্র। হারিয়ে গেছে শিলপাটা ধার কাটান বলে হাঁক দেয়া শিল্পীরা। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে সারা দেশের মত বগুড়ার ধুনটেও বিলুপ্তির পথে এই শিল্প। অনেক স্থানে পাটা খোদাই শিল্পীরা বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। তবে কেউ কেউ শতকষ্ট উপেক্ষা করেও ধরে রেখেছেন গ্রামীন ঐতিহ্যের এই পেশা। বর্তমান প্রযন্মের তরুন কিশোররা খোদাইশিল্পীদের সাথে খুব একটা পরিচিত নয়। কোন না কোন গ্রামে বা গ্রামের আশে পাশে এখনও দেখা মেলে খোদাইশিল্পীদের। তাদের মধ্য বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হাঁসখালী গ্রামের স্বর্গীয় সুধীন চন্দ্র রাজভরের ছেলে শ্রী সুকুমার চন্দ্র রাজভর। প্রায়ই আশেপাশে এলাকাতে শিলপাটা ধার দিতে আসেন সুকুমার। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে জীর্ণশীর্ণ দেহ। তবু চশমা চোখে হাতে হাতুরি ছেনি নিয়ে ছুটে চলেন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। এসব যন্ত্রের সাহায্যে কাঠঠোকরা পাখির মত ঠুকে ঠুকে করেন শিলপাটা ধার দেয়ার কাজ। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগ থেকে এ কাজ শুরু করেন। মাঝ পথে অন্য পেশা থাকলেও টিকিয়ে রেখেছেন শৈল্পীক এই পেশা।
সুকুমার চন্দ্র রাজভর জানান, স্বাধীনের আগে ও পরে দির্ঘদিন প্রতিটি শিলপাটা ধার কাটতে মজুরী হিসেবে নিতাম এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) চাউল। এখন নানা ধরনের ইলেক্টিক মসলা বাটার যন্ত্র আসায় শিলপাটার কদর কমেছে। এখন খুব একটা কাজ হয় না। বাড়ী বাড়ী গিয়ে ডাক হাঁকের যুগ চলে গেছে। কেউ খবর দিলে তার বাড়িতে গিয়ে কাজ করে দিয়ে আসি। এখন প্রতিটি শিলপাটা ধার কাটতে মজুরী হিসেবে পাটার আকার ভেদে একশ থেকে দেড়শো টাকা নিয়ে থাকি।
একসময় গ্রামবাংলার এমন কোনো ঘর ছিল না যেখানে শিলপাটা ছিল না। গৃহিণীরা নিজ হাতে মসলা বাটতেন। এখন আধুনিক প্রযুক্তির দাপটে শিলপাটা অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। কালের বিবর্তন ও আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে শিলপাটার ব্যবহার। এতে আর্থিক কষ্টে পড়ে অনেকেই বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। এরপরেও সুকুমারে মত হয়তো চোখে চশমা পরে কাঠঠোকরা পাখির মতো ঠুক ঠুক শব্দে শিলপাটা কেটে চলছেন অনেকে।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।