মনিরুজ্জামান মিল্টন, যশোরঃ
বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিশাল জলরাশি, যতদুর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। এবারের বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টি আর বন্যার পানিতে ভরে যায় ভবদহ এলাকায় বিলগুলো। দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। চারমাস পার হলেও এখন পর্যন্ত বিলগুলো ভরে আছে পানিতে। ফলে যশোরের অভয়নগর উপজেলার থাকা আটটি বিলে এবার ব্যহত হচ্ছে বোরো আবাদ।
ব্যাহত হবার আশংকা এবারের বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। জলবদ্ধ এলাকার কৃষকেরা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের পর এলাকার কোনো বিলে টিআরএম{(টাইডাল রিভার ম্যানেমেন্ট ) চালু না থাকায় পলি পড়ে বিলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর বুক উঁচু হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না।
এঅবস্থায় গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় অভয়নগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও একটি
পৌরসভার(আংশিক) ৭০টি গ্রামের বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট ও ধর্মীয় উপসনালয়।তলিয়ে যায় কয়েকহাজার মাছের ঘের ও ফসলি জমি। জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
জলাবদ্ধতার চারমাস পার হলেও পানি কমেছে মাত্র দুই থেকে আড়াই ফুট । এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অভয়নগরের কেদারিয়া, গান্ধিমারী, বোকড়, ঝিকড়া, কাছুরাবাদ,
ছোন্দা, ডুমুর এবং ধলিরবিল পানিতে টইটম্বুর। বিলে এখনও ৪ থেকে ৬ ফুট পানি।
অভয়নগর উপজেলা কৃষিদপ্তর জানিয়েছে, সাধারণত ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ থেকে ৩১জানুয়ারি পর্যন্ত চলে বোরো ধানের চারা রোপন প্রক্রিয়া। চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা
হয়েছে ১৪ হাজার ১১০ হেক্টর। সূত্রমতে এবার জলাবদ্ধতার কারণে অভয়নগরে প্রায় দুইহাজার হেক্টরে বোরো আবাদ হবে না। তবে কৃষি অফিসের ওই হিসাবকে প্রত্যাখ্যান করে ভবদহ
পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা বলছেন এবার বিলে পানির পরিমান বেশি থাকায় ভবদহ এলাকার ২৫ হাজার হেক্টর এবং অভয়নগর অংশে ছয় হাজার হেক্টরে বোরো আবাদ
হবে না।
উপজেলার ধোপাদী গ্রামের কৃষক ওয়ালিউজ্জামান লিটু বলেন, ‘কাছুরাবাদ বিলে আমাদের ১৫ বিগে(৪২ শতকে বিঘা) জমি আছে। বন্যায় এহেতো আমন ধান বুড়ে গেছে ইবার
ইরি(বোরো) ধান অবে নানে। কুব যন্ত্রনায় আছি। ছেলেপুলে নিয়ে না খায়ে মরতি অবেনে।’
সুন্দলী এলাকার কৃষক কানু বিশ্বাস বলেন, ‘বিল বোকড়ে আমার আড়াই বিগে(৫২ শতকে বিঘা) জমি রইছে। সেহানে এহনও পাঁচ ফুট জল। ধান রুতি পারছিনা। কুব দুঃশ্চিন্তায় আছি।’
বিলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালীর সাতবিঘা(৪২ শতকে বিঘা) রয়েছে। ওই জমিতে ছিটেফেঁাটা ধান হবে না জানিয়ে তিনি
বলেন,‘ অভয়নগরের অন্তত ৮টি বিলে এখনও ৪ থেকে ৬ ফুট জল। প্রতিটা বিলের আয়তন হাজার হেক্টরের উপরে। সেচ দিয়ে বিলের উপরের অংশের দু এক জাগায় হয়ত ফসল হতে পারে।
তবে অধিকাংশ বিলে এবার ফসল হবে না। অনাবাদি থাকবে অন্তত ছয় হাজার হেক্টর।’
জানতে চাইলে অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাম্মদ লাভলী খাতুন বলেন,আপনারা তো জানেন এবারের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কথা। উপজেলায় এবার বোরো আবাদের
লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ১১০ হেক্টর। বিলগুলো এখনও পানিতে ভরে আছে। অনেক বিলে সেচ দিয়ে পানি অপসারণ করে বোরো আবাদের চেষ্টা চলছে। জানুয়ারি মাস ধরে বোরোর চারা রোপন চলবে। তারপরও প্রায় দুইহাজার হেক্টরে বোরো আবাদ সম্ভব হবে না।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।