নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী জালালাবাদ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিতে দীর্ঘদিন থেকে জর্জরিত। যেখানে কোন বিধিবিধানের বালাই নেই। যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তাকেই কব্জা করে চলে অনিয়ম। অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রসাশক বরাবরে অভিযোগ করা হলেও তদন্ত পর্যন্ত গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের চাঁপে চাঁপা পরে যায় সব অনিয়ম।
গত ২০১৭ সালের একটি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় তৎকালীন স্থানীয় সরকার, সিলেট এর উপপরিচালক (উপ সচিব) জনাব দেবজিত সিংহ একটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করেন। জেলা প্রশাসক বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হলেও এই অভিযোগের বিষয়ে কোন স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। ফলে অদ্যবধী সেখানে চলে ডাক্তার বানানোর নানা অপকৌশল। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কলেজ ক্যাম্পাস সংকীর্ণ এবং সেখানে ক্লাশ রুম, প্র্যাক্টিক্যাল ল্যাব, শিক্ষক মিলনায়তন সবগুলো মিলে এক গিজগিজে অবস্থা বিরাজমান মর্মে উল্লেখ করেন। চিকিৎসা শিক্ষার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্টানে একটি আধুনিক সরঞ্জাম সম্বলিত ল্যাব ও একটি লাইব্রেরি থাকা প্রয়োজন বলেও তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। সরেজমিন গিয়ে এখনো এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসিন মনোভাব পরিলক্ষিত হয়।
তাছাড়া বর্তমানে কলেজটি যেখানে অবস্থিত তাহা ভূমি অর্পিত সম্পতি হিসাবে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ডীয় আছে বলেও উল্লেখ করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ডীয় জায়গায় অনুমতি ব্যতিত জোর পূর্বক কলেজ কর্তৃপক্ষ স্থায়ী বিল্ডিং নির্মান করে বর্তমানে কলেজ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন যাহা সরেজমিনে দেখা যায়। যেখানে হোমিওপ্যাথিক কলেজ এর স্বীকৃতির জন্য উক্ত কলেজের নামে নিজস্ব জায়গা থাকার কথা উল্লেখ আছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ তথ্য গোপন করে দলীয় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক বোর্ড এর দূর্নীতি গ্রস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজজে এই স্বীর্কৃতি এনেছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
তাছাড়া কলেজের ভূমি ক্রয়ের জন্য অর্থ পর্যাপ্ততার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ জায়গা ক্রয় করেছেন মর্মে জানা গেলেও ক্রয়কৃত ভূমিতে কলেজের কোন দখল নেই বলে জানা যায়।
প্রতিবেদনে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ২০০৩ সালের পর হতে কোন নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণে করা হয়নি বলে স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও ২০০৩ সাল হতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিয়োগকৃত শিক্ষকদের ব্যাপারে অদ্যবধী কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। কলেজের শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের কথা উল্লেখ থাকলেও কোন নীতিমালা অনুসরণ না করেই কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে আবারো ৪ জন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করেছেন মর্মে অনুসন্ধানে জানা যায়। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় ২০১৬ সালে সরকার সর্বশেষ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা প্রনয়ন করেন। কিন্তু উক্ত কলেজের ২০১৯ সালে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধি অনুসরণে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে মর্মে দেখা যায়। যেখানে একটি আইন প্রনয়ন করা হলে পূর্ববর্তী আইন বাতিল হিসেবে গন্য করা হয়। তাছাড়া ১৯৮৫ এর রেগুলেশন অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগে ৩ বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলা থাকলেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১ বছরের অভিজ্ঞতার উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায় ২০১৯ সালে নিয়োগকৃত শিক্ষক কেউই ২০১৬ সালের বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগ পাবার যোগ্য নয়। ঐ শিক্ষকদের অবৈধ নিয়োগ প্রদানের জন্য ২০১৩ এর বিধিমালা অনুসরণ করে সকল নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
এছাড়া ২০১৭ সালে ২ জন উপাধ্যক্ষ পদে পদোন্নতির বিষয়ে কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে বোর্ড কর্তৃক অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। যাহা ২০১৬ সালের নিয়োগ নীতিমালার পরিপন্থি। নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী জৈষ্টতার ভিত্তিতে পদোন্নতির উল্লেখ আছে যা এই কলেজে উপেক্ষিত।
তাছাড়া এই কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দ্বারা দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ কলেজ পরিচালিত হচ্ছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। এই ১০ বছরে একটিও অধ্যক্ষ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি বলে জানা যায়। যা এই কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার বহিপ্রকাশ বলে মনে করেন অত্র কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তদন্ত প্রতিবেদনে সার্বিক মন্তব্যে নিয়োগবিধি অনুসরণপূর্বক যথাশীঘ্রই যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি আবশ্যক বলে উল্লেখ করেন। প্রয়োজনে নীতিমালা অনুসরণে যোগ্য ও দক্ষ এমবিবিএস/বিএইচএমএস ডিগ্রিধারীদের অতিথি শিক্ষক/অনারারী/খন্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু বর্তমানেও উক্ত সুপারিশ অনুসরণ না করে নিজেদের ইচ্ছামতো অদক্ষ রাজনৈতিক দলীয় ডিপ্লোমাধারী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কর্তৃপক্ষ পূর্বের অনিয়মকে ধামাচাপা দেয়ার পায়তারা করছে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
এই সকল অভিযোগ কলেজের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে গত ২০/০৮/২০২৪ এবং ২০/১০/২০২৪ তারিখে জেলা প্রশাসক, সিলেট বরাবরে প্রদান করা হয়েছে যার তদন্ত অদ্যবধী চলমান আছে। কিন্তু তদন্তের দীর্ঘ সূত্রীতার কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করছেন মর্মে অনুসন্ধানে জানা যায়। জেলা প্রশাসক এর কাছ থেকে আইন সংগত সমাধান পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শিক্ষার্থীরা।
গত ২৮/১২/২০২৪ তারিখ হতে ডিএইচএমএস-২০২৩ পরিক্ষা শুরু হয়েছে। যেখানে চলছে নানা অনিয়ম। নকলের মাধ্যমে পাশ করে ডাক্তার পদবী লেখানোই এই হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের একমাত্র কাজ বলে জানা যায়। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কোন পদক্ষেপ নেই বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। এই কলেজে সারা বছর কোন ক্লাশ হয় না। নেই কোন বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক। তবুও এই কলেজ থেকে প্রতি বছর বের হচ্ছে ডাক্তার পদবীধারী অনেক মানুষ। অনুসন্ধানে দেখা যায় অনেকেই চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্বন্ধে নূন্যতম জ্ঞান না থাকা স্বত্তেও এই কলেজে ভর্তি হয়ে নিয়ে নিচ্ছেন ডাক্তার হবার সার্টিফিকেট। যোগ্য ব্যক্তিরাই ডাক্তার লেখার অনুমতি পাবে সেটা হোমিওপ্যাথিক হউক বা এলোপ্যাথিক হউক। কিছু অসাধু মানুষের কারণে যেন এই ডাক্তার পদবীর কোন অবমাননা না হয় সেই বিষয়ে নজর দেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সুশীল সমাজ। জালালাবাদ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ সকল অনিয়মকারী, দূর্নীতিবাজদের হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং একটি সুন্দর চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্টান হিসাবে গড়ে উঠবে এই প্রত্যাশা সকল স্তরের মানুষের। আর এই বিষয়ে সিলেট জেলা প্রশাসনের দ্রুত ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।