ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আকোটের চর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর তীরে চলছে ফসলি জমির মাটি কাটার ধুম। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিন-রাত ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি মহল। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। এক্সকাভেটর দিয়ে এমনভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, একটু বৃষ্টি হলেই পাশের জমি ভেঙে পড়বে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাশের জমির মালিকও।সেই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ।কৃষিবিদদের মতে, জমির উপরিভাগের চার থেকে ছয় ইঞ্চি (টপ সয়েল) গভীরের মাটিতেই মূল পুষ্টিগুণ থাকে। মূলত মাটির এই স্তরে ফসল উৎপাদিত হয়। মাটির এই স্তর কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়। এজন্য অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। তাছাড়া কৃষিজমি ওপরের এ টপ সয়েল হারিয়ে ফেললে তা স্বাভাবিক হতে প্রায় ১০-১২ বছর লাগে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানে উপস্থিত একাধিক কৃষক জানান, অবৈধভাবে মাটি ও বালু কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেই বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে পদ্মার পাড় থেকে রাতের আঁধারে প্রতিনিয়ত মাটি কাটে তারা। রতভর চলে তাদের কর্মযজ্ঞ। তাদের কালো হাত অনেক লম্বা, যার দরুন প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারেন না অনেক কৃষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জমির মালিক জানান, নদ-নদীর চরের নতুন মাটিতে শস্য খুব ভালো ফলে। জমিতে বাদাম, ভুট্টা, কলাইয়ের চাষ করা হয়। তবে পাশের জমির মালিক মাটি কেটে বিক্রি করছে। মাটি টানার জন্য ব্যবহৃত গাড়ি চলাচলের কারণে তার জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ধুলো ও রাতভর গাড়ির শব্দের কারণে তাদের বসবাস করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। অথচ মাটির উপরি ভাগ ( টপ সয়েল) অপসারন ও কৃষি জমি নষ্ট করে অননুমোদিত শ্রেনী পরিবর্তন বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে সদরপুরের পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন এলাকা নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বসতভিটা হারিয়েছেন কয়েক শ পরিবার। আর এখন শুষ্ক মৌসুমে পদ্মাপাড়ের মানুষের নতুন আতঙ্ক মাটি ব্যবসায়ীরা। পদ্মার ভাঙন ও মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) u ২০১৩ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের অর্থ দন্ড ও কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ আইন প্রয়োগ করবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা বলেন, আমরা নিয়মিত মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। পদ্মার পাড় থেকে রাতের আঁধারে মাটি কাটার ঘটনা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। পদ্মার চর দুর্গম এলাকা হওয়ায় ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অভিযানের পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।